২০১২ সালে শোবিজে পদচারণার সঙ্গে শুরু করেন তাঁর কর্মজীবন। প্রথমে সহকারী হিসেবে এক-দুই বছর কাজ করার পর, পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এর পর থেকে তিনি আড়াইশেরও বেশি নাটক নির্মাণ করেছেন। ছোট পর্দায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পর এবার বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক ঘটছে। এই ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাচ্ছে তাঁর প্রথম সিনেমা ‘বরবাদ’।
সিনেমায় আসতে এতটা সময় কেন নিলেন? “নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করার জন্য সময় নিয়েছি। কয়েক বছর আগে থেকেই মনে হয়েছিল—এখন সিনেমা করা উচিত। তবে আমি চেয়েছিলাম, একটা ভালো গল্প, ঠিকঠাকভাবে সিনেমায় এনে দর্শকের কাছে উপস্থাপন করব। তাই কিছুটা অপেক্ষা করেছি।”
আপনার প্রথম সিনেমায় দেশের শীর্ষ তারকা শাকিব খান থাকাটা কি পরিকল্পিত ছিল?
“না, সেটা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল না। প্রতিটি নির্মাতা স্বপ্ন দেখে সিনেমা বানানোর, আর আমি তার ব্যতিক্রম না। শাকিব খান তো মেগাস্টার—সবার ইচ্ছা তাঁর সঙ্গে কাজ করার। আমি নিজেও তাঁকে নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম, আর প্রথম সিনেমাতেই তা বাস্তবায়িত হয়েছে। এ নিয়ে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি।”
গল্পের প্রয়োজনে শাকিব খানকে নিয়েছেন, নাকি তাঁর জন্য গল্প তৈরি করেছেন? “পুরোটাই গল্পের প্রয়োজন। ২০২০ বা ২০২১ সালের দিকে, একদিন গ্লোরিয়া জিনসের সাথে কফি খেতে গিয়ে হঠাৎ একটা গল্প মাথায় এলো। সেই প্লট থেকেই আমি গল্পটি গড়ে তুললাম। যখন প্রধান চরিত্রের ধারণা জাগ্রত হলো, তখনই মনে হল—এই চরিত্রের জন্য শুধু শাকিব খানই উপযুক্ত। গল্পটি তাঁর জন্য না, বরং গল্পের উদ্দেশ্যে শাকিব খানকে আমার গল্পে জায়গা করে নিলাম। যখন শাকিব ভাইয়ের সাথে গল্প শেয়ার করলাম, তিনি খুব পছন্দ করেন এবং কাজ করার জন্য রাজি হন।”
গত বছরে শাকিব খান কতগুলো রেকর্ড ভাঙেছেন; আপনার লক্ষ্য কী? “এই মুহূর্তে শুধু সিনেমাটি সফল করতে চাই। ‘বরবাদ’ তৈরি করেছি, আমি চাই সবাই এই ছবি দেখুক আর উপভোগ করুক। অবশ্য, ব্যবসাও ভালো হোক—এটাই প্রত্যাশা। আগে রেকর্ড ভাঙবে কি না জানি না, তবে আমার মূল আকাঙ্ক্ষা হলো, ছবিটা দর্শকদের কাছে প্রমাণিত হোক। যদি বরবাদ ভালো যায়, তবে তা ইন্ডাস্ট্রির জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে প্রযোজকের সংখ্যা বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীরাও সাহসী হবে।”
যারা শাকিব ভক্ত নয়, তারা ‘বরবাদ’ কেন দেখবে? “দেখুন, তুফান সব ধরনের দর্শকেই আকর্ষণ করে। ভালো গল্প ও নির্মাণ থাকলে, যে কোনও শ্রেণীর দর্শকই সেটি উপভোগ করবে। বরবাদ একেবারে বিনোদনধর্মী—এতে আছে রোমান্স, অ্যাকশন, ড্রামা, ইমোশন, নাচ-গান সবকিছু। আমি আশা করি, সবাই ছবিটি দেখে সন্তুষ্ট হবে।”
এখনো সিনেমাটি সার্টিফিকেশন বোর্ডে জমা পড়েনি কেন? “সিনেমার কাজ সম্পন্ন হলেও, প্রিভিউয়ের পর কিছু জায়গায় কারেকশন করার প্রয়োজন বোধ করেছি। সেই কারণে সাময়িকভাবে কাজের প্রক্রিয়ায় একটু বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি, সপ্তাহান্তেই জমা দিয়ে দেব।”
‘বরবাদ’-এর পর কী আসবে? “এখনো ঠিক করে কিছু বলিনি। দুই-তিনটি সিনেমার প্রস্তাব এসেছে। আপাতত বরবাদ মুক্তির পর, এক মাসের মধ্যে নতুন কোনো সিনেমা নিয়ে ভাববো। আমি নির্মাতা হিসেবে সব মাধ্যমেই—নাটক, ওটিটি ইত্যাদিতে—কাজ চালিয়ে যেতে চাই, কারণ আমার গল্প বলার অবিরাম ক্ষুধা আছে।”
নাটক থেকে পরিচালনায় আসা নির্মাতাদের নিয়ে অনেক মন্তব্য হয় যে, ‘অভিনয়ে পারেন না, নির্মাণে জানেন না’। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? “আমি মনে করি, যে পারে সে সব জায়গাতেই পারে। শুধু মাধ্যমের পরিবর্তন হয়, আর কিছু না। আমি নাটক থেকেই আসছি, আর এখন সিনেমা বানিয়েছি। এখন পর্যন্ত টিজার বা গান প্রকাশের পর কেউ এমন মন্তব্য করেনি যে, ‘এটা নাটক হয়ে গেছে’। দর্শকরা যেমন ছবি দেখবে, তেমনি আমি চাই—মন্তব্য করার আগে কাজটা ভালো করে দেখুন।”
ঈদে আরো বেশ কিছু সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, আপনাকে বাদ দিয়ে আর কেউ দেখবেন? “এখন পর্যন্ত জংলি ও চক্কর সিনেমার টিজার আমার কাছে ভালো লেগেছে। দুটিই অসাধারণ হয়েছে। আমি চাই, সব সিনেমায় গিয়ে দর্শকরা নিজেই দেখে ঠিক করবে।”