আজকের ডিজিটাল যুগে, ইউটিউব, টিকটক, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের সহায়তায় কেউ সহজেই কনটেন্ট নির্মাতা হতে পারেন। মাত্র কয়েক মিনিটের ভিডিও তৈরি করেই ক্যারিয়ার শুরু করা যায়। তবে পেশাদার স্তরে পৌঁছাতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যারের প্রয়োজন।
মৌলিক সরঞ্জাম
• স্মার্টফোন: অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর শুরু করেন স্মার্টফোন দিয়ে। একটি ভালো স্মার্টফোন যেটি ফুল এইচডি বা ফোর-কে রেজল্যুশনে ভিডিও ধারণ করতে পারে, যথেষ্ট। ইলেকট্রনিক ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন থাকলে ভিডিওর কাঁপা কমবে। ফোর-কে রেজল্যুশন ও অপটিক্যাল স্ট্যাবিলাইজেশনের সুবিধা থাকলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বাজারে এই ধরণের স্মার্টফোন প্রায় ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
• ট্রাইপড/ফোনস্ট্যান্ড: এক হাতে ফোন ধরে ভিডিও ধারণ করা কঠিন। ৫০০ থেকে ২,০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ট্রাইপড বা ফোনস্ট্যান্ড পাওয়া যায়, যা ফোনকে স্থির করে মসৃণ ফুটেজ নিশ্চিত করে। চলমান বিষয়বস্তুর জন্য স্মার্টফোন গিম্বলও ব্যবহার করা যেতে পারে।
• লাইটিং: ছবি ও ভিডিও আকর্ষণীয় করতে সঠিক আলোর ব্যবহার অপরিহার্য। ঘরের লাইটের বদলে রিং লাইট বা সফট লাইট বক্স ব্যবহার করা উত্তম। ভালো মানের লাইট ১২০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়, বিশেষ করে যারা সেলফি ক্যামেরা দিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্য রিং লাইট অত্যন্ত জরুরি।
• মাইক্রোফোন: ভিডিওতে স্পষ্ট শব্দ ও কম নয়েজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৮০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের মাইক্রোফোন পাওয়া যায়, তবে নয়েজ রিডাকশন ফিচারসহ ভালো মডেল পেতে বাজেট বাড়িয়ে প্রায় ৩০০০ টাকা খরচ করতে হতে পারে। ভিডিও ফরম্যাট ও এডিটিং
• ভিডিও ফরম্যাট: অধিকাংশ কনটেন্ট নির্মাতা ৬০ এফপিএস এ ভিডিও ধারণ করেন, কিন্তু সাধারণ কনটেন্টের জন্য ১০৮০পি বা ফোর-কে রেজল্যুশনে, ৩০ এফপিএস এ রেকর্ড করাই যথেষ্ট। সিনেমার শুটিং ২৪-২৫ এফপিএস এও করা হয়, তাই শুধু এফপিএস বেশি হওয়াই মানের দিক নয়।
• ভিডিও সম্পাদনা: ফুটেজ ধারণের পর ভিডিওকে আকর্ষণীয় করে তুলতে অডিও, ট্রানজিশন ও ইফেক্ট যোগ করতে হয়। পিসি, স্মার্টফোন বা ট্যাবে ভিডিও এডিট করা যায়। জনপ্রিয় কিছু সফটওয়্যার ও অ্যাপের মধ্যে রয়েছে:
• অ্যাডবি প্রিমিয়ার প্রো: ইন্টারফেস ও টাইমলাইন কাস্টমাইজেশনের মাধ্যমে সহজে ভিডিও কাটাছেঁড়া করা যায়। আফটার ইফেক্টসের সাথে চমৎকার ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস যোগ করা সম্ভব।
• দা ভিঞ্চি রিসলভ: বিনামূল্যে এবং প্রতিটি ফ্রেমে আলাদা কালার গ্রেডিং করার সুযোগ দেয়, যা প্রিমিয়ারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
• ক্যাপকাট: স্মার্টফোনে সহজে ব্যাকগ্রাউন্ড মুছে ফেলা, রয়্যালটি ফ্রি মিউজিক ও অটোক্যাপশনসহ বেশ কিছু ফিচার রয়েছে, তবে সব ফিচারের জন্য প্রিমিয়াম সংস্করণ প্রয়োজন।
• ইনশট: নতুনদের জন্য সহজবোধ্য ইন্টারফেস, প্রি-কাস্টমাইজড কালার ইফেক্ট ও সহজে ভিডিও কাটা-জোড়া দেওয়ার সুবিধা।
• কিনেমাস্টার: ক্রোমা কি, ম্যাজিক রিমুভার, সুপার রেজল্যুশন ও অন্যান্য উন্নত ফিচারসহ স্মার্টফোনে ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য বহুল ব্যবহৃত।
• আইমুভি: আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য বিনামূল্যে, অটো-এডিট টেমপ্লেট এবং প্রো-রেস কালার গ্রেডিং এর জন্য জনপ্রিয়।
• কপিরাইট মুক্ত সাউন্ড: ভিডিওতে কপিরাইট ভঙ্গের ঝামেলা এড়াতে ইউটিউব অডিও লাইব্রেরি থেকে রইট ফ্রি সাউন্ড ব্যবহার করা উত্তম। প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন
• সামাজিক মাধ্যম: ১-৩ মিনিটের ছোট ভিডিওর জন্য টিকটক, ফেসবুক রিলস ও ইউটিউব শর্টস আদর্শ। এ ক্ষেত্রে ভিডিওটি ৯:১৬ অনুপাতের হতে হবে যাতে মোবাইল স্ক্রিনে লম্বালম্বি দেখা যায়।
• দীর্ঘ ভিডিও: যদি লম্বা ভিডিও তৈরি করতে চান, তবে ১৬:৯ অনুপাতের ভিডিও তৈরি করুন যা ইউটিউব ও ফেসবুকে ভালোভাবে উপস্থাপিত হয়। একই ভিডিও একাধিক প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করলে ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। উপসংহার পেশাদার কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য শুধুমাত্র সঠিক সরঞ্জাম নয়, বরং উপযুক্ত ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার, মানসম্মত ক্যামেরা ফিচার ও সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রতিভা যদি থাকে, তবে কিছু নির্দিষ্ট বিনিয়োগে আপনি খুব দ্রুত পেশাদার ভিডিও কনটেন্ট নির্মাতায় পরিণত হতে পারবেন।