জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে নিজের ক্যারিয়ারজুড়ে রাজনীতির কারণে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। তার দাবি, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে পরিবারের সম্পৃক্ততার কারণে গত ১৬ বছর ধরে তিনি নানা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের পর থেকে তার সংগীতজীবনে কঠিন সময় শুরু হয়, একের পর এক শো বাতিল হতে থাকে, সিনেমার গান পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি তার ফেসবুক পেজও হঠাৎ উধাও হয়ে যায়।
ন্যান্সি তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ২০১১ সালে প্রজাপতি সিনেমার জন্য সেরা নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মনোনয়ন পান, যা ২০১৩ সালে প্রদান করা হয়। তবে সে সময় তার বড় কন্যা অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি এবং পরে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পুরস্কার সংগ্রহ করেন। এরপর ২০১৩ সালের শেষের দিকে ফেসবুকে একটি রাজনৈতিক মন্তব্য করার পর তার জীবন বদলে যায়। সেই পোস্ট রাতারাতি ভাইরাল হলে পরদিন মধ্যরাতে তার নেত্রকোনার বাড়ি ঘেরাও করা হয়।
তার মা নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি ছিলেন উল্লেখ করে তিনি লেখেন, পুলিশ এসে তাদের বাড়িকে ‘জঙ্গি আস্তানা’ হিসেবে সন্দেহ করতে থাকে। তিনি রাজি না হওয়ায় তার ছোট ভাইকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর তিনি বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচলেও হয়রানি বন্ধ হয়নি। এরপর একের পর এক কনসার্ট বাতিল হতে শুরু করে, সিনেমার গান পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলো একে একে নিখোঁজ হতে থাকে।
তিনি লেখেন, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংগীতাঙ্গনে তার জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক মতপ্রকাশের কারণে তাকে অলিখিতভাবে ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়। দেশের বেশিরভাগ টেলিভিশন চ্যানেলে তার উপস্থিতি কমে যায়, তবে বাংলাভিশন তখনও তাকে প্রচার করেছে। অর্থনৈতিক, মানসিক ও সামাজিক চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি একসময় নেত্রকোনায় ফিরে যান। সেখানে প্রতিদিন বাসার সামনে পুলিশের ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকত, আতঙ্কের মধ্যে কাটতে থাকে তার দিনরাত। অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভুগে তিনি এক পর্যায়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
ন্যান্সি জানান, সংগীতাঙ্গনে টিকে থাকতে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে থাকেন। সিডি চয়েস, সাউন্ডটেকসহ কিছু প্রতিষ্ঠান তাকে সহায়তা করে এবং তাদের ব্যানারে একের পর এক গান মুক্তি পেতে থাকে। তবে সিনেমার গানে জায়গা পাওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, গত ১১ বছরে তিনি মাত্র ১১টি সিনেমার গান গেয়েছেন, যেখানে তার ক্যারিয়ারের জনপ্রিয় গানগুলোর বেশিরভাগ ২০১৪ সালের আগেই মুক্তি পেয়েছে।
তার স্ট্যাটাসের একপর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগ বহু আগেই ‘ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত’ হয়ে গেছে এবং এখন এটি ‘সন্ত্রাসী লীগ’ ও ‘বট লীগ’-এ পরিণত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সংগীতজগৎ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে তার মনোবল ও ভক্তদের ভালোবাসার কারণে তিনি এখনো টিকে আছেন।
এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে দলটির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।